বৃষ্টির মৌসুম শেষ দিকে। তবুও ডেঙ্গির প্রকোপ রয়ে গেছে। এই জ্বরে অনেকেরই প্লাটিলেট কমে যায়। যেটি খুবই বিপজ্জনক।
ডেঙ্গিতে প্লাটিলেট ঠিক থাকলেই যে রোগী ভালো থাকবে তা-ও নয়। প্লাটিলেট দিলেই যে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে এমনও নয়। অনেক কারণেই প্লাটিলেট কমে যেতে পারে। ডেঙ্গি জ্বরে প্লাটিলেট কমে গিয়ে নয় বরং রোগী মারা যায় ডেঙ্গি শক সিনড্রোমে। তাই প্লাটিলেট কাউন্ট ১০ হাজারের ওপরে থাকলে এবং এক্টিভ ব্লিডিং না থাকলে এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
ডেঙ্গির প্লাটিলেট কমে যাওয়ার লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন হেমাটোলজি বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
* ডেঙ্গি জ্বরে কী ঘটে
ডেঙ্গি ভাইরাসের কারণে রক্তনালিগুলো আক্রান্ত হয়। রক্তনালির গায়ে যেসব ছোট ছিদ্র থাকে সেগুলো বড় হয়ে যায়। তা দিয়ে রক্তের জলীয় উপাদান বা রক্তরস বের হয়ে আসে। ফলে রক্তচাপ কমতে থাকে, হেমাটোক্রিট বা পিসিভি বা প্যাকড সেল ভলিউম বাড়তে থাকে। এটা ঠেকাতে তখন রোগীকে পর্যাপ্ত ফ্লুইড বা তরল দিতে হবে। এই তরল মুখে খাওয়ানো যেতে পারে বা শিরায় দেওয়া হয়ে থাকে।
মানুষের রক্তে তিন ধরনের রক্তকণিকার সবচেয়ে ছোট কণিকাটি হলো প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকা। রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে প্লাটিলেট। তাই এটি কমে গেলে রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং বেড়ে গেলে রক্ত জমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে।
বয়স্কদের প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকার স্বাভাবিক মাত্রা দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। যখন রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট কম থাকে তখন তাকে বলা হয় থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া। আর যখন বেশি থাকে তখন তাকে বলা হয় থ্রোম্বোসাইটোসিস।
* প্লাটিলেট কমে যাওয়ার লক্ষণ
* শরীরের যে কোনো স্থান থেকে সূক্ষ্ম রক্তপাত, যা পিনপয়েন্টের আকারে দেখা দেয়। ত্বকে বেগুনি রঙের চিহ্ন দেখা যায়। কারণ ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হয়।
* মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।
* মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে।
* প্রস্রাব বা মলের সঙ্গে রক্তপাত।
* শরীরের কোথাও কাটলে অনেকক্ষণ ধরে রক্তপাত হয় ইত্যাদি।
* ডেঙ্গি জ্বরে করণীয়
ডেঙ্গি হলে প্লাটিলেট কত তা ঘন ঘন না দেখে বরং রোগীর অন্যান্য বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন। যেমন-রক্তচাপ ঠিক আছে কি-না, রোগী পানি শূন্যতায় ভুগছে কি-না, রক্তের পিসিভি বা হেমাটোক্রিট কেমন তা দেখা উচিত। যদি এমনটি হয় তাহলে পর্যাপ্ত তরল দিন বা ফ্লুইড কারেকশন করুন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। প্রয়োজন হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। দেরিতে হাসপাতালে আসলে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ে।