মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এর মাধ্যমে জুয়ার অর্থ লেনদেন হচ্ছে কিনা, কিংবা পাচার বা সাধারণ ব্যবহারকারীর ভান করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের নির্দেশনা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, দেশে ডিজিটাল ই-কমার্স ব্যবসার ইমেজ উন্নত করার জন্য এমএফএস-এর কর্মকর্তাদেরকে সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্টগুলো পরীক্ষা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অনিয়ম দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে সন্দেহভাজন লেনদেন বাতিল করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি কারিগরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, অনলাইনে ট্রান্সন্যাশনাল জুয়ার সঙ্গে জড়িতদের এমএফএস অপারেটররা সহজেই অবৈধ ক্লায়েন্টদের শনাক্ত করতে পারে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্র জানায়, ওই সভায় পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংককে অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট বন্ধ করতে আলাদা আলাদা চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিটিআরসি’র মাধ্যমে ৩০০টিরও বেশি অনলাইন জুয়া ওয়েবসাইট মুক্ত করা হবে।
এরপর গত ১০ অক্টোবর, বিটিআরসি’র ডিজিটাল নিরাপত্তা সেল তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসাবে ৩৩১টি অনলাইন বেটিং ওয়েবসাইট ব্লক করেছে।
কমিশন গুগল সার্চ ইঞ্জিন, ফেসবুক এবং ইউটিউবের মতো আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে আরও ২৪৬টি অ্যাপ এবং অনলাইন জুয়া বা বাজির সঙ্গে সম্পর্কিত লিঙ্কগুলো ক্র্যাক ডাউন করতে বলেছে। ১৫০টি গুগল অ্যাপের মধ্যে প্লে স্টোর কর্তৃপক্ষ ১৪টি জুয়া সংক্রান্ত অ্যাপ প্লে স্টোর থেকে মুছে ফেলেছে এবং বাকি ১৩৬টি অ্যাপ বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিটিআরসি’র একটি অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে, ফেসবুক এবং ইউটিউবও সম্প্রতি ১৭টি জুয়ার লিঙ্ক ব্লক করেছে বলে সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত কয়েক বছরে মোট ৬ হাজার জুয়ার ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছে।
অনলাইন জুয়া লেনদেন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, দেশের শীর্ষ এমএফএস পরিষেবা প্রদানকারী বিকাশ এর শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্রাহক বা এজেন্টের ছদ্মবেশে কোনো সন্দেহজনক লেনদেন হলে বিকাশ বাংলাদেশ ফিনান্সশিয়াল ইন্টিলিজেন্ট ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অবহিত করেছে। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। অতীতে এ ধরনের সন্দেহজনক ঘটনার ভিত্তিতে বেশ কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
নগদ’র হেড অব পাবলিক কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম সজল বলেন, সাধারণত আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী অসৎ অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করি এবং বিএফআইইউকে জানাই। এরপরই বিএফআইইউ ওইসব অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টের বেশিরভাগ লেনদেন ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে বা প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যক্তির নামে নয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল ই-কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা জুয়া ও বাজির ওয়েবসাইট বন্ধ করতে বিটিআরসিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। বিভ্রান্তকর কার্যকলাপ ও জুয়া খেলার ওয়েবসাইটের কারণে ই-কমার্স ব্যবসায়ী এবং ক্লায়েন্টদের আস্থা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। অনেক সময় মনে হয় জুয়া খেলার সাইটগুলো দেশের বাইরে থেকে হোস্ট করা হয় কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যেন সেগুলো বাংলাদেশে অবস্থিত।
তিনি বলেন, ব্লক করা কিছু ওয়েবসাইট ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের (ভিপিএন) মাধ্যমে খোলা হতে পারে। এছাড়া, বিটিআরসি গুগল কর্তৃপক্ষকে সেই সাইটগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে যাতে তাদের রিয়েল-টাইম অবস্থান সর্বজনীনভাবে দেখা যায়।